ডা. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী
ডা. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ২৮ আগস্ট, ১৯৫৫ ইং নরসিংদী জেলার ইব্রাহীমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রয়াত জনাব আব্দুল হাই চৌধুরী ছিলেন একজন ব্যবসায়ী এবং মাতা প্রয়াত জনাবা সুফিয়া খাতুন ছিলেন একজন নিবেদিত সমাজ সেবিকা, লেখিকা।
ডা. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী একজন স্বনামধন্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, যিনি চোখের চিকিৎসায় বাংলাদেশে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। বাংলাদেশ আই হস্পিটাল ও বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হস্পিটাল সহ বেশ কয়েকটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, বিশেষত: বাংলাদেশ আই ট্রাস্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের চক্ষু সাজর্ন তৈরীতে বিশেষ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়া তিনি চক্ষু সেবা সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সংগঠন, যেমন- ক্যাটারেক্ট এন্ড রিফ্লেকটিভ সার্জনস সোসাইটি গঠনের মাধ্যমে বিশিষ্ট চিকিৎসকবৃন্দের সমন্বয়ে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
ডা. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ছাত্র জীবনে একজন মেধাবী, সৃজনশীল, বাকপটু, সাহসী ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯৭২ সালে সিনিয়র ক্যামব্রিজ-সেন্ট জোসেফ হাই স্কুল থেকে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে নটরডেম কলেজ, ঢাকা থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় উল্লেখযোগ্য নম্বর পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৮২ সালে এম.বি.বি.এস পাশ করেন। মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় তাঁর সুন্দর, সাবলীল ব্যবহার, মেধা, সততা, সৃজনশীল মনোভাব, নজরকাড়া ব্যক্তিত্ব এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্ব সকলকে আকৃষ্ট করে, যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছাত্র সংসদের ভি.পি পদে নির্বাচিত হন। ছাত্র নেতৃত্বে থাকাকালীন সময়ে তিনি বেশ কিছু সাহসী ও সময়পযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যা এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইতিহাসে বিরল। তিনি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান এন্ড সার্জনস থেকে ফেলোশীপ অর্জন করেন।
কর্মজীবনে ডা. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ১৯৮২ সালে সহকারী সার্জন হিসেবে এবং ১৯৮৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সাল থেকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৯০ সাল হতে ২০০৪ পর্যন্ত মুজিবুন্নেছা আই হাসপাতালে কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আহমেদাবাদ, হায়দ্রাবাদ, থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন জায়গার স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে আধুনিক ফেকো সার্জারিতে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন, যা চোখের ছানি অপারেশনে এক নতুন দ্বার উন্মোচন করে।
মুজিবুন্নেছা চক্ষু হাসপাতালে থাকাকালীন সময়ে তাঁর মধ্যে বিদ্যমান উদ্যোগী মনোভাব ও নতুন কিছু করার অদম্য ইচ্ছা থেকে ২০০৪ সালে বিশিষ্ট রেটিনা বিশেষজ্ঞ ডা. নিয়াজ আব্দুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন চক্ষু বিশেষজ্ঞদের সাথে নিয়ে বাংলাদেশ আই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ আই হাসপাতাল এন্ড ইন্সটিটিউট হিসেবে পরিচিতি পায়। এই হাসপাতালে চোখের বিভিন্ন রোগের বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। ডা. মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর অনবদ্য প্রচেষ্টায় ও একনিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে বিশিষ্ট চিকিৎসকগণের সমন্বয়ে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। করোনা মহামারির সময় সমাজের সকল স্তরের কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে এই হাসপাতাল। বাংলাদেশে অকাল অন্ধত্ব দূরীকরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নিজ গ্রামে পিতার নামে “আব্দুল হাই চৌধুরী দাতব্য হাসপাতাল” ও মাতার নামে “সুফিয়া হাই স্কুল” পরিচালনার মাধ্যমে হতদরিদ্র রোগীদের চক্ষু সেবা এবং গ্রামের ছেলে মেয়েদের সুশিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন।
দেশ বিদেশে জেনারেল পাবলিকেশন হিসেবে এবং জার্নালে ডা. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী এর বিভিন্ন চিকিৎসা বিষয়ক লেখা প্রকাশিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন ফোরামে তাঁর লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কবিতা আবৃত্তিও করেন। পাশাপাশি একজন ক্রিকেটার হিসেবে আবাহনী ক্রীড়া চক্রে দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলেছেন।