জেড আই খান (পান্না)

অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম খান পান্না। জেড আই খান পান্না নামে সুপরিচিত।

১৯৪৮ সালের ৩০ শে নভেম্বর বরিশালে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর শখগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বই পড়া, গান শোনা আর নেশা হল সবুজ চা পান করা।

বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন অ্যাডভোকেট এবং ২০০৪ সাল হতে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল-এর নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষায় সম্মুখ সারির একজন আইনজীবী হিসেবে তিনি সুনামের সাথে পেশাগত জীবনে দীর্ঘ ৪০ বছরের অধিক সময় অতিবাহিত করেছেন। বর্তমানে তিনি দেশের অন্যতম মানবাধিকার সংগঠন ‘ব্লাস্ট’ এর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, নাগরিক উদ্যোগ-এর এক্সিকিউটিভ বোর্ডের সদস্য, আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের কো-কনভেনর এবং ইতিপূর্বে ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র ’ (আসক) এর চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জনাব জেড আই খান (পান্না) বরিশালের বিখ্যাত নেতা খান বাহাদুর হাশেম আলী খানের নাতি। জনাব হাশেম আলী খান ছিলেন শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও রাজনৈতিক সহচর। তিনি বরিশাল জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৩৪ সালে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৩৭ সালে আবারও কৃষক প্রজা-পার্টির নোমিনি হিসেবে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালের পূর্বে দেশ-বিভাগ-উত্তর সময়ে দক্ষিণ বঙ্গের কৃষকদের পক্ষে ও জমিদারদের বিরুদ্ধে প্রজা আন্দোলনের নেতা ছিলেন। শের-এ-বাংলাকে বেঙ্গলের মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। শের-এ-বাংলা যখন প্রোগ্রেসিভ কোয়ালিশন গঠন করেন, তখন হাশেম আলী খান ছিলেন সেই মন্ত্রিসভার কৃষি, ঋণ শালিশী বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সমবায় বিষয়ক মন্ত্রী এবং অবিভক্ত বাংলার প্রথম সংসদের এমএলএ। বরিশালে তাদের বাড়িতে সবসময় ছিল রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনা। দেশবন্ধু চিত্ত রঞ্জন দাস, মহাত্মা গান্ধী, সুভাষ বসু, মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, মাওলানা শওকত আলী, মাওলানা মোহাম্মদ আলী সহ তৎকালীন সকল নেতাদের গমনাগমন ছিল তাঁদের বাড়িতে। পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালের নির্বাচনে নির্বাচনি প্রচারণায় বের হয়ে ঝড়ে নৌকাডুবিতে তিনি মারা যান। জেড আই খান (পান্না) ছোটবেলা থেকেই দাদার সন্নিকটে ও সান্নিধ্যে থেকে বড় হয়েছেন। সেই কারনে তাঁর মধ্যে রাজনৈতিক জীবন সংক্রান্ত চেতনাগুলো খুব গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে এবং দাদা হাশেম আলী খানের নেতৃত্বের যোগ্য উত্তরাধিকার এখন বহন করছেন জনাব জেড আই খান (পান্না)।

ছোটবেলা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-দীক্ষা বরিশালেই করেছেন তিনি। স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকার তাঁকে বরিশালের বি এম কলেজ থেকে বহিষ্কার করলে, তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। করাচী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র‍্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। পশ্চিম পাকিস্তানে থাকাকালীন পশ্চিম পাকিস্তান ছাত্রলীগ গঠন করে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে সিন্ধ মুসলিম ল’ কলেজে এল এল বি প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি গ্র‍্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। পাকিস্তানের উভয় প্রদেশে বঙ্গবন্ধুর সাথে একই মঞ্চে বহুবার বক্তব্য রাখার সৌভাগ্যও অর্জন করেছেন।

১৯৭০ এর নির্বাচনে প্রার্থীদের সপক্ষে জোরদার প্রচারণা চালানো, সাংগঠনিক ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত পরিকল্পনা এবং সেই অনুযায়ী কাজও করেছেন তিনি। বরিশাল (সেক্টর নং ২) মুজিব বাহিনীর সহ-অধিনায়ক হিসেবে ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ পরবর্তীতে জেল খেটেছেন একটানা ২৭ মাস এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল প্রায় ১৭ টি। বরাবরই প্রতিবাদী ছিলেন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণেই এইসব মামলা দায়ের করা হয়।

তিনি ১৯৮০ সালে আইন পেশায় প্রবেশ করেন এবং ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন। ক্রমান্বয়ে মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্দোলনগুলোতে সংক্রিয়ভাবে আত্মনিয়োগ করেন এবং ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন আইনজীবীদের প্রিয় অভিভাবক।