অধ্যাপক ডা. তাহমিনা বানু

অধ্যাপক ডা. তাহমিনা বানুর জন্ম ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রাম শহরে। তিনি ডা. খাস্তগীর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের একজন প্রাক্তন ছাত্রী এবং ঢাকা, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকায় পেডিয়াট্রিক সার্জন হিসেবে প্রশিক্ষিত।

ডা. তাহমিনা বানু বাংলাদেশের একজন অগ্রগামী পেডিয়াট্রিক সার্জন, যিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগ প্রতিষ্ঠা ও এর বিকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি ২০১৭ সালে শিশু সুরক্ষা এবং কল্যাণের কথা মাথায় রেখে চিটাগাং রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পেডিয়াট্রিক সার্জারি (CRICS) প্রতিষ্ঠা করেন। CRICS প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন রোগ থেকে শিশুদের সুরক্ষা এবং সর্বোপরি শিশুর সুস্থতার জন্য প্রতিরোধ ও নিরাময় সংক্রান্ত ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে। তিনি গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ ফর চিলড্রেনস সার্জারি’র (GICS) একজন বোর্ড সদস্য। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল সার্জারি কোর্সে একজন ওভারসিজ ফ্যাকাল্টি। তাঁর উদ্ভাবন গুলোর মাঝে রয়েছে – প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলো ব্যবহার করে গ্রামীণ শিশুদের অস্ত্রোপচার সেবা প্রদানের জন্য আউটরিচ সার্জিক্যাল প্রোগ্রাম; রোগীদের ভোগান্তি কমানোর জন্য কম খরচের বিভিন্ন কৌশল যেমন পান পাতা ব্যবহার করে স্টোমা’র যত্ন, ডিস্ট্যান্ট কোলোগ্রামের পরিবর্তে ব্যানানাগ্রাম ইত্যাদি।

ডা. তাহমিনা ঢাকা বিআইসিএইচ থেকে স্নাতকোত্তর (এমএস পেডিয়াট্রিক সার্জারি) করেছেন। তিনি রয়্যাল কলেজ অফ সার্জনস এবং রোয়ান নিক্স রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান কলেজ অফ সার্জনসের ফেলো। তিনি বর্তমানে চিটাগাং রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর চিলড্রেন সার্জারি, সংক্ষেপে CRICS এর পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। এই প্রতিষ্ঠানটিকে তিনি ২০১৭ সালে পূর্ণাঙ্গ আকার প্রদানে সাহায্য করেছিলেন।

অধ্যাপক ডা. তাহমিনা বানু গত ৩০ বছর ধরে শত শত জন্মগত ত্রুটিযুক্ত শিশুকে সহায়তা করছেন, যাতে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। “অস্ত্রোপচার প্রয়োজন এমন কোনো শিশুকে চিকিৎসার বাইরে রাখা হবে না”, এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি কাজ করছেন। CMCH-এর পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের সমস্ত প্রতিকূলতা অতিক্রম করার গল্প রচনা করেছেন এই চিকিৎসক। তাঁর শুরুটা সহজ ছিল না। একজন মেয়েকে সার্জনের ভূমিকায় দেখাটা তখনকার সময়ে চিন্তা করাটা দুঃসাধ্য। তাঁর পুরুষ সহকর্মীরা তখনও ভাবছিলেন কেন শিশু সার্জারির জন্য একটি পৃথক বিভাগ প্রয়োজন, যেখানে আগে থেকেই অস্ত্রোপচারের জন্য একটি বিভাগ রয়েছে! অন্যদিকে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি শিশু সার্জারি বিভাগ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অটল ছিলেন। তিনি ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এক্সোমফালোস (যা পেটের একটি বিরল ত্রুটি যেখানে অন্ত্র, লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গগুলি পেটের বাইরে থাকে) এর এক শিশুর অস্ত্রোপচার করেন। এই শিশুটি বাংলাদেশের প্রথম বেঁচে থাক এক্সোমফালোস রোগী। ১৯৯৩ সালের আগস্টে তৎকালীন সরকার শিশু সার্জারি বিভাগ চালু করে এবং আটটি সরকারি মেডিকেল কলেজে পদ প্রদান করে। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডা. তাহমিনা সিএমএইচে শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। তাঁর নেতৃত্বে এই বিভাগটি হাইপোস্প্যাডিয়াস নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার, কর্মশালা এবং লাইভ অপারেটিভ ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছে ও এর চিকিৎসা গবেষণার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিভাগটি চট্টগ্রাম উপকূলের কাছে ইউএস নৌবাহিনীর সমুদ্রগামী হাসপাতাল ‘মার্সি’তে ‘অপারেশন স্মাইল’ প্রোগ্রামটিতেও অংশ নেয়। তিনি ২০১৭ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন। অবসর গ্রহণের পর ডা. তাহমিনা বানু চিটাগাং রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর চিলড্রেন সার্জারী (CRICS) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ও তাঁর গবেষণা দল এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বল্প খরচের কোলাবোরেটিভ অস্ত্রোপচার, স্কুল হেলথ স্ক্রীনিং, সার্জিক্যাল সেবা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করছেন। এই প্রতিষ্ঠানে যারা চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারে না, তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান ও অস্ত্রোপচার করা হয়।